নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ দুদিন আগেই পার হয়েছে রোজ ডে। এখন চলছে সরস্বতী পুজো। সামনে ভ্যালেন্টাইনস ডে। আর ইদানিং এই বিশেষ দিনগুলোতে গোলাপের একটি বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। অনেকে প্রিয়জনকে উপহার হিসাবে দেন গোলাপ ফুল। কিন্তু বছরের অনেকটা সময় গোলাপ নিয়ে মেতে থাকা স্কুল শিক্ষক পুলক জোয়ারদার ছেলেমেয়েদের পরামর্শ দিচ্ছেন, কাউকে গোলাপ উপহার দেওয়ার আগে নিজেরা বাড়িতে একটি দুটি করে গোলাপের চারা লাগিয়ে তার যত্ন করতে পারে। তারপর সেখানে ফুল হলে সেই ফুল উপহার দিলে তার তৃপ্তি অন্যরকম।
এখন শিলিগুড়ি রথখোলায় বাড়ি শিক্ষক পুলক জোয়ারদারের। তিনি বরদাকান্ত বিদ্যাপীঠ এর বিজ্ঞানের শিক্ষক। তার স্ত্রী চৈতালি কর্মকারও ওই স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা। পুলকবাবুর বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ তরঙ্গপুর গ্রামে।স্কুল জীবন থেকেই তিনি গাছ পরিচর্যা করতে ভালোবাসেন। এখন ৪৯ বছর বয়সেও তিনি ছাড়তে পারেননি ফুল গাছ পরিচর্যা। শুধু ফুল গাছ নয়, তিনি তার বাড়ির ছাদে সবজি চাষ করেন। বেগুন, টমেটো,আরও অনেক কিছু। একটি টমেটোর ফলন তার টবে হয়েছে এক কেজি দুশ সত্তর গ্রাম ওজনের। সবজি ও ফুল চাষের জন্য তিনি ফুল মেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে পুরস্কার পেয়েছেন। তার ঘর ভরে গিয়েছে বিভিন্ন পুরস্কারে। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান গোলাপ চাষে। একসময় ৮০/৯০ রকমের গোলাপ ফুল তিনি চাষ করেছেন । এখন তার কাছে আছে ২৫ রকমের গোলাপ ফুলের গাছের চারা যেমন মাশকারা, নারাঙ্গা,লাভ সহ আরো অনেক। কলকাতা ছাড়াও গাছের চারা নিয়ে আসা হয়েছে বেঙ্গালুরু থেকে। লাল- হলুদ- গোলাপি -সাদা সহ আরো অনেক রকম গোলাপ ফুল এখন তার ছাদ ভরিয়ে রেখেছে। স্কুলে চাকরি করলেও প্রাইভেট টিউশন করার কোনও নেশা তার নেই। প্রতি মাসে এই ফুল চাষের পিছনে তার তিন হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি এসব ফুল বিক্রি করা বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করেন না। তার কথায়, এর থেকে নিজে আনন্দ পাওয়া যায় আর অন্যকেও আনন্দ দেওয়া যায়। তবে গোলাপ ফুল চাষ করতে তিনি বেশি ভালোবাসেন। কারণ, গোলাপ ফুলের সৌন্দর্য অন্যরকম। তাছাড়া সারা বছর ধরে গোলাপ ফুল পাওয়া যায়। গোলাপের সুগন্ধিও আলাদা। তার বক্তব্য, চারদিকে যেভাবে নেতিবাচক ভাবনা বাড়ছে সেদিক থেকে ফুল গাছ নিয়ে মেতে থাকলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। ফুল বা গাছ পরিচর্যায় পরিশ্রম করলে তৈরি হয় ইতিবাচক ভাবনা। আর ভালোবাসার টানে তিনি প্রায়ই গাছ এর কাছে চলে যান ছাদে। কোন গাছ নষ্ট হলে বা পোকার আক্রমণ হলে তিনি প্রচণ্ড কষ্ট পান। কিকরে সেই গাছকে বাঁচাবেন সেই নিয়ে মেতে ওঠেন। স্কুলছাত্রদেরও তিনি ফুল গাছের পরিচর্যা করার পরামর্শ দেন। তার মতে,এই গাছ পরিচর্যায় স্বনির্ভরতাও আসতে পারে। গাছগাছালি নিয়ে থাকলে প্রকৃতির অনেক কাছে যাওয়া যায়। আর সে শান্তি বলে বোঝানো যাবে না। অনেকেই পুলকবাবুকে গাছ পাগল হিসাবেও চিহ্নিত করেন।যদিও তাতে তার কোনওকিছু যায় আসে না।