নিজস্ব সংবাদদাতা,দার্জিলিং,ঃ আশঙ্কার কালো মেঘ কাটলো পাহাড়ে। বন্ধ হচ্ছে না দার্জিলিং পাহাড়ের কোন হোটেল। মঙ্গলবার সকাল থেকে খুলে যাচ্ছে জিটিএ এলাকার সমস্ত হোটেল। সোমবার বিকেলে দার্জিলিং-এর লালকোঠিতে আয়োজিত এক বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
করোনা সংক্রমনের জেরে লকডাউনের আগে থেকেই পর্যটনে ভাটা পড়েছে পাহাড় সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই সিকিমে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সিকিম সরকার। আর তার ফলে সিকিম-দার্জিলিং সার্কিটে অবস্থিত দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিক, কালিম্পং সহ পাহাড়ের সমস্ত জায়গায় পর্যটনে জোর ধাক্কা আসে। এরপর দেশ জুড়ে শুরু হয় লকডাউন। আড়াই মাস ধরে চলছে লকডাউন। ১ লা জুন থেকে আনলক ওয়ান-এর মাধ্যমে পর্যটন ব্যবসায় কিছুটা ছাড় দেওয়া হলেও, জিটিএ এলাকায় হোটেল খোলা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরী হয়। দার্জিলিং পাহাড়ের ভরা মরসুমের দিনগুলিতে ব্যবসা করতে না পারায়, কিভাবে হোটেল কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বেতন মেটানো হবে, তা নিয়ে আশঙ্কার কালো মেঘ জমতে শুরু করে পাহাড়ের হোটেল ব্যবসায়। শেষ পর্যন্ত এই সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের ডাক দেয় জিটিএ।
সেই মতো সোমবার বিকেলে দার্জিলিং-এর লাল কুঠিতে আয়োজিত হয় বৈঠক। বৈঠকে জিটিএ চেয়ারম্যান অনিত থাপা, জেলা শাসক এস পুন্যমবলম, পুলিশ সুপার কে অমর নাথের পাশাপাশি দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, দার্জিলিং হোটেল স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ একাধিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মঙ্গলবার থেকে খুলে যাবে জিটিএ এলাকার সমস্ত হোটেল।
জিটিএ এলাকার সমস্ত হোটেল মিলে প্রায় ১০ হাজার কর্মচারী কাজ করেন। সরকারি নির্দেশিকা মত, লকডাউন পিরিয়ডে এই সমস্ত কর্মচারীদের ১০০% বেতন দেওয়ার কথা বলেছে সরকার। কিন্তু লকডাউনের কারণে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন শিল্পে, কর্মচারীদের ১০০% বেতন দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয় হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। সমস্যা সমাধানে, কর্মচারীদের বেতন কত শতাংশ দেওয়া হবে, তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আজকের বৈঠকে। এই কমিটিতে জিটিএ, এবং প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের পাশাপাশি, দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, দার্জিলিং হোটেল স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন এবং ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে হোটেল কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করবে এই কমিটি।
এই বিষয়ে, দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঙ্গে ভুটিয়া জানান, জট কাটিয়ে জিটিএ এলাকার সমস্ত হোটেল সুষ্ঠুভাবে চলার ক্ষেত্রে তারা আশাবাদী। অন্যদিকে, জিটিএ চেয়ারম্যান অনিত থাপা জানিয়েছেন, বিষয়টির ওপর তারা নজর রাখছেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পর্যটন অ্যাসোসিয়েশন হিমালয়ান হসপিটালিটি এবং ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটয়ার্ক এর সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানান, জিটিএ এলাকার হোটেল কর্মচারীদের বেতন নিয়ে মালিক এবং কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো। আজকের বৈঠকে যে কমিটি গঠিত হয়েছে, সেই কমিটি সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশাবাদী তারা। এর ফলে, দার্জিলিং পর্যটনে কিছুটা আশার আলো দেখা গেলো বলে জানিয়েছেন সম্রাট সান্যাল।>