নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ একটা সময় ছিল যখন ব্রেন টিউমার নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কে ভুগতেন। ধরেই নিতেন, মৃত্যু অবধারিত। এখন কিন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে। শুরুতেই যদি ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে তবে অপারেশন ও চিকিৎসায় মানুষ পুরো সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। তবে এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। শনিবার বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবসে শিলিগুড়িতে এসব কথা জানালেন প্রখ্যাত নিউরোসার্জন ডাক্তার মলয় চক্রবর্তী।
বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবসকে সামনে রেখে এদিন শিলিগুড়ি এস এফ রোডে ডাক্তার মলয় চক্রবর্তীর নার্সিংহোমে সাংবাদিক বৈঠকটি হয়।সেখানে ডাক্তার চক্রবর্তী ছাড়াও তার স্ত্রী কাবেরি চক্রবর্তী, শল্য চিকিৎসক ডাঃ এস পি ব্যানার্জী,অঙ্কোলজিস্ট ডাক্তার বাসব সরকার, ডাঃ টিকানাথ শর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ডাক্তার মলয় চক্রবর্তী মানুষকে সচেতনতার জন্য ব্রেন টিউমারের কতগুলো লক্ষন উল্লেখ করেন। যেমন, ১)রোগীর খিচুনি হবে, ২)খুব মাথাব্যথা হবে, অনেকসময় মাইগ্রেনের মতো ব্যথা হয় ৩) বমি হবে,ভোরের দিকেই বেশি বমি হয়,৪)ঘুম ঠিক হবে না, ৫) চোখের দৃষ্টি কমতে থাকে বা চোখ ঝাপসা হতে থাকে ৬) একটু ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে, ৭)শরীরের একটা অংশ প্যারালিসিস বা অবশ হয়ে যায় ৮) স্মরনশক্তি কমে যাবে।
তাই মাথা ব্যথা হলে অবহেলা করা উচিত নয়।মাথা ব্যথা হলে স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পরও আটদশদিন ধরে ব্যথা না কমলে কোনও নিউরোলজিস্টকে দেখিয়ে সিটি স্ক্যান বা এম আর আই করা প্রয়োজন। আর তাতে ব্রেন টিউমার ধরা পড়লেই নিউরোসার্জনের সঙ্গে দেখা করে অপারেশন বা চিকিৎসায় যাওয়া উচিত। শুরুতে ব্রেন টিউমার ধরা পড়লে রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু তাদের কাছে বহু রোগী অনেক দেরীতে আসেন যখন তার টিউমার ক্যানসার শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। ডাক্তার চক্রবর্তী বলেন, তার নার্সিং হোমেই মাসে পাঁচ ছয়টি ব্রেন টিউমারের অপারেশন হচ্ছে। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অপারেশন ছাড়াও কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি করে রোগী সুস্থ হচ্ছেন।
ব্রেন টিউমার নিয়ে এখনও অনেক গবেষণা চলছে। নানান কারন আছে ব্রেন টিউমার হওয়ার। মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ ২০ শতাংশ হলেই সাবধান।তখন মোবাইল ফোনকে চার্জে বসাতে হবে। সেইসময় ফোনে কথা নয়। বংশে কারও ব্রেন টিউমার থাকলে তা থেকে হতে পারে ব্রেন টিউমার। কিছু ভাইরাস থেকেও হতে পারে ব্রেন টিউমার। তবে সব কারন এখনও জানা যায়নি। গবেষণা চলছে।
শিলিগুড়িতে এখন ব্রেন টিউমারের ভালোই অপারেশন হচ্ছে। খরচ চল্লিশ হাজার টাকা। ওষুধপত্র সহ আনুষঙ্গিক মিলিয়ে মোট ৭৫ হাজার টাকা খরচ। যদি প্রথম দিকে তা ধরা পড়ে। তবে যারা খুব গরিব তাদেরকে তারা ছাড় দেন এমনকি বিনা পয়সাতেও চিকিৎসা করার বহু নজির আছে বলে জানান ডাঃ চক্রবর্তী। সাত দিন আগেই কাটিহারের ৮৪ বছর বয়স্কাা দুর্গাদেবীর মাথা থেকে ৬৫০ গ্রাম টিউমার বের করা হয়েছে অপারেশনের সাহায্যে।এখন তিনি ভালো আছেন। ডাক্তার মলয় চক্রবর্তী চান, রিকশা চালক, ঠেলা চালক থেকে সমাজের নিচু তলাতেও এই রোগ নিয়ে সচেতনতা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ুক। কোথাও সচেতনতার শিবির হলে তিনি সেখানে যোগ দিতে রাজি।