মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু ছবি নিয়ে অন্যরকম সংগ্রহশালা শিলিগুড়ি শান্তিনগরে

বাপি ঘোষ ঃ ১৯৯০ সালে কাজের সন্ধানে তিনি_ কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি এসেছিলেন। যেহেতু তিনি চিত্র শিল্পী তাই শিলিগুড়ি বিধান রোডের একটি ছাপাখানায় অঙ্কন বিষয়ক একটি কাজ পেয়ে যান।কিন্তু পরবর্তীতে কম্পিউটার পুরোদমে চালু হওয়ায় ছাপাখানার অনেক কাজে তাঁর অঙ্কন বিদ্যা গৌন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তারপরও ছাপাখানার মালিক তাঁকে ছাঁটাই না করে ছাপাখানার বিভিন্ন প্রুফ রিডিংয়ের কাজে তাঁকে নিয়োগ করেন।কিন্তু এবার আর রক্ষা হয়নি।করোনার জেরে গতবছর এপ্রিল মাসে সেই ছাপাখানার মালিকই প্রয়াত হয়েছেন। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছাপাখানা, আর তিনি কর্মহীন হয়ে বাড়িতে। কাজ না থাকায় আর আগের মতো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংগ্রহের কাজ করতে পারছেন।করোনা শুরু হওয়ার আগে তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিন কিনতেন। আর সেইসব পত্র পত্রিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি তিনি যেখানেই দেখেছেন তা কেটে নিজের বাড়িতে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কেনার জন্য অর্থ প্রয়োজন। কাজ না থাকায় এখন আর সেই অর্থ নেই। ফলে এখন আর আগের মতো মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সংগ্রহ করতে পারছেন না।
শিলিগুড়ি শান্তি নগর বৌ বাজারের বাসিন্দা এই চিত্র শিল্পী। নাম আনিসুর রহমান। বয়স ৫৬।কলকাতার টালিগঞ্জে তাঁর জন্ম।২৪ পরগণার সুশীল কর কলেজ থেকে তাঁর পড়াশোনা। সপ্তম শ্রেনী থেকে তাঁর নেশা ছবি আঁকাতে। পোট্রের্ট, ল্যান্ডস্কেপ, মাইক্রোআর্ট করেন তিনি। তাঁর চিত্র শিল্পের গুরু কলকাতার বিখ্যাত চিত্র কর আমির আলি। তবে এসবের চেয়ে তাঁর বিশেষ নেশা মুখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংগ্রহ করা।এখন তাঁর ঘরে গেলেই দেখা যাবে চারদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আর ছবি। গোটা ঘর মমতাময়। ১৯৮৪ থেকে এখন পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২ হাজার ছবি তিনি সংগ্রহ করেছেন। আর সেসব নিয়ে তিনি একটি সংগ্রহশালা খুলতে চান। বাজারে রাস্তাঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি কোথাও দেখলেই তিনি সেইসব ছবি বাড়ি নিয়ে আসেন আর তা সযত্নে রেখে দেন।
কিন্তু কেন মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সংগ্রহের নেশা, প্রশ্নের জবাবে আনিসুর রহমান বলেন,” ১৯৮৪ সালে কলকাতায় একটি বড় মিছিল হয়েছিল ইংরেজি তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে।বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে সেই বিরাট মিছিলে আমিও অংশ নিয়েছি।আর সেই সময় প্রতিবাদী নেত্রী হিসাবে দেখেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।তখন থেকেই বুঝতে পারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন বিরাট কিছু হবেন।আর তখন থেকে আমার শুরু হয় তাঁর ছবি সংগ্রহের নেশা। আজও চলছে। ” করোনা শুরু হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নতে দেখাও করেছেন এই শিল্পী। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সংগ্রহের এই কাজের ওপর তিনি একটি সংগ্রহশালাও খুলতে চান বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাতে সমর্থনও দিয়েছেন বলে আনিসুর জানিয়েছেন। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ায় পর সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়। তবে শিলিগুড়িতে পুরসভার প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান গৌতম দেব ইতিমধ্যে আনিসুরের সঙ্গে দেখা করেছেন।
করোনার ওপর পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কিছু ছবির সৃজন করেছেন এই শিল্পী। মাইক্রোআর্টে তিনি বহু বিষয়ের ওপর প্রতিভা মেলে ধরেছেন। যেমন মুসুর ডালের ওপর ভারতের মানচিত্র, হাওড়া ব্রীজ তার ব্যতিক্রমী কাজের নমুনা। মুসুর ডালের ওপর এরকম তাঁর অনেক সূক্ষ্ম শিল্প কর্ম রয়েছে। চোখের পাতার ওপর তিনি এঁকেছেন ভারতের মানচিত্র। ত্রিশটিরও বেশি সূক্ষ্ম শিল্প কর্ম রয়েছে তাঁর। এখন একটি ছোটখাটো চিত্রাঙ্কন শেখানোর স্কুলও চালান তিনি।যদিও তাতে ছাত্র করোনার জন্য কমেছে। ফলে আর্থিক সঙ্কটও এইসময় তাঁর প্রতিভা বিকাশে বড় বাধা হয়ে উঠছে।