শ্যামল সরকারঃ গোটা বিশ্ব আজ করোনার গ্রাসে কাঁপছে। ভারতও তার বাইরে নয়। এক বিরাট দুর্যোগ শুরু হয়েছে। এই সময় দু’একটি কথা বলতে চাই খবরের ঘন্টার মাধ্যমে।
প্রথমেই বলি আমি শিলিগুড়ি দুই মাইল জ্যোতিনগর শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত। সেখানে যুক্ত থেকে ঠাকুরের ভাবকে সামনে রেখে কিছু সামাজিক কাজ করি। এই দুর্যোগের সময় তাই পিছিয়ে থাকতে পারে না আমাদের সোসাইটিও। করোনার জেরে লকডাউন শুরু হওয়ায় বহু গরিব মানুষ, দিনমজুর বিপাকে পড়েছেন। অভুক্ত সেইসব মানুষের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়াই বড় মানবিক ধর্ম।সেই জন্য ২৯ মার্চ থেকে আমাদের খাদ্য বন্টন কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে আমরা প্রতিদিন পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি আলু, ৫০০ গ্রাম করে ডাল পৌঁছে দেওয়ার কাজে নামি। তারপর শুরু হয় একদিন পর একদিন। ট্রাফিক পুলিশের অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুলিশের হাতে এখন আমরা একদিন পর একদিন করে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছি। সঙ্গে আমরাও থাকছি। মাথাপিছু চাল তিন কেজি, আলু এক কেজি, ডাল পাঁচশ গ্রাম। একশ জন করে মানুষ এখন এই ত্রান পাচ্ছেন রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সোসাইটি থেকে। সোসাইটির বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষী সহায়তা করছেন। এরমধ্যে সভাপতি যেমন আছেন তেমনই ডাঃ অরুপ দাস আছেন। আমিও ওই ত্রানের বিরাট অংশে সহায়তা করছি।
এরপর আসি শিল্পের কথায়। শিলিগুড়ি সেভক রোডের দুই মাইল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে আমার শিল্প কারখানা সরকার টাইলস। এখন সে শিল্প বন্ধ লকডাউনের জেরে। এর সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা সঙ্কটে রয়েছে। যারা স্থায়ী কর্মী তাদের বেতনতো দিতেই হচ্ছে। আর যারা দিনহাজিরার কর্মী, তাদের অবস্থা খুব খারাপ। তাদেরকে আমরা পাঁচ কেজি চাল, দুকেজি আলু, এক কেজি ডাল তুলে দিচ্ছি। সঙ্গে পাঁচশ টাকা। জানি না, কতোদিন পারবো।
শিল্প কারখানার ওপর বিরাট ধাক্কা এসেছে। এমনিতেই জি এস টি, নোট বন্দি মিলিয়ে বিগত তিন চার বছর ধরে বাজারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তারমধ্যে মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো চলে এসেছে এই করোনা মহামারী। আমরা লকডাউন মেনে নিয়েছি। কারন আমাদেরও পরিবার রয়েছে। সবার কথা চিন্তা করে আমরা লকডাউনে সামিল হয়েছি। কিন্তু এই যে বিরাট ধাক্কা তা সামলানোর মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই আমরা রাজ্য ও কেন্দ্রের সরকারের কাছে বিভিন্ন আর্থিক ঋনের ওপর ছাড় এবং শিল্প কারখানার জন্য আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তাব রাখছি। সরকার এখন সব শিল্প কারখানাকে প্যাকেজ না দিলে সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাতে বেকার সমস্যা ভয়াবহ আকার নেবে।
শিল্পগুলো চলে তিনরকমভাবে। একতো বিরাট পুঁজি বিনিয়োগ। তারপর ব্যাঙ্ক ঋন। এরপর আছে মার্কেটিং। এখন ধরুন আমাদের শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। মার্কেটিং বন্ধ। কিন্তু ব্যাঙ্কের সুদ কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা চালু রয়েছে। আমাদের কাজ না হলেও ব্যাঙ্কের সুদ গ্রহণ বন্ধ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে তাই গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করা প্রয়োজন।
সামনে পয়লা বৈশাখ। বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বা দিন এটা। নববর্ষ শুরু। এবারে আমরা আর পয়লা বৈশাখের সেই বড় অনুষ্ঠান করতে পারবো না। পয়লা বৈশাখের পুজো হবে ঘট পুজোর মাধ্যমে।গণেশ পুজোয় আমরা প্রার্থনা করবো, আমাদের সকলের ভুল ভ্রান্তি যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়। প্রকৃতির সঙ্গে আমরা যে খেলা করেছি, সেদিকটির প্রতি আমাদের বিশেষভাবে মনে রেখে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে আর খেলা নয়। পয়লা বৈশাখের দিনে আমাদের নতুনভাবে শপথ নিতে হবে।
সবশেষে বলবো, সবাই শারীরিক দিক থেকে ফিট থাকুন।যোগাসন করুন। শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করুন। আর করোনা ঠেকাতে আমরা সবাই এখন সংঘবদ্ধ থাকবো কিন্তু বিভক্ত থাকবো। অকারণে আমরা এখন কেও বাড়ির বাইরে বের হবো না। আতঙ্ক নয় কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করুন। করোনার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে সতর্কতার মাধ্যমে। সবাই ভালো থাকুন।
( লেখক শ্যামল সরকার খবরের ঘন্টা পত্রিকার উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য)