নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ একসময় পরিবার চালাতে গিয়ে তাঁকে বিড়ি শ্রমিক হিসাবেও কাজ করতে হয়েছে। বিড়ি বাঁধার কাজ করলেও সেই শৈশব এবং যৌবনে সকলকে বই পড়ার নেশায় ডুব দেওয়ার জন্য তিনি উৎসাহিত করেছেন।রুটিরুজির জন্য কিছু দিন বিড়ি শ্রমিক হিসাবে কাজ করলেও তিনি তারা লেখালেখির নেশা থেকে কখনো সরে আসেননি।নিজে যেমন লিখেছেন অন্যকেও লেখালেখির নেশায় ডুব দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।আর আজ প্রায় আশি বছর বয়সে পৌঁছেও লেখালেখি বিশেষ করে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনকে তিনি ছাড়তে পারেননি। বার্ধক্যে পৌঁছেও তিনি নজিরবিহীনভাবেই পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছেন।নিজের পেনশনের টাকায় তিনি প্রকাশ করে চলেছেন লিটল ম্যাগাজিন উত্তর ধ্বনির একেকটি সংখ্যা। শিলিগুড়ি রবীন্দ্র নগর নিবাসী লেখক বীরেন চন্দ আজ বার্ধক্যে পৌঁছেও এক নজির তৈরি করেছেন বিভিন্ন মহলে।গত ১৫ জানুয়ারি তাঁর সম্পাদনায় উত্তর ধ্বনি পত্রিকার ৪৫ বছর পূর্তি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে।পাঁচশ পৃষ্ঠার সেই পত্রিকার দাম রাখা হয়েছে ৬৫০ টাক।আর এটি ছাপতে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। যখন নেট দুনিয়া এবং সোস্যল মিডিয়ার দৌলতে লিটল ম্যাগাজিন বা ক্ষুদ্র পত্র পত্রিকার আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে তখন এই বার্ধক্যে পৌছেও পেনশনের টাকায় বীরেনবাবুর এই উত্তর ধ্বনি প্রকশনা একটি উল্লেখ করার মতো বিষয়। বছরে উত্তর ধ্বনির একটি সংখ্যাই প্রকাশিত হয়।একসময় তিনি রাজ্যে গ্রন্থাগার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মানুষকে গ্রন্থাগারমুখী করতে তিনি বহু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। শৈশব থেকেই তিনি বই পড়তে ভালোবাসতেন আর চাকরিও ১৯৬৬ সালে গ্রন্থাগার দপ্তরে হওয়ায় তিনি বেশ খুশি হন।শিলিগুড়ির মহকুমা গ্রন্থাগার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগারিক হিসাবে তিনি অবসর নেন।শিলিগুড়িতে অতিরিক্ত জেলা গ্রন্থাগার স্থাপনেও একসময় তিনি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন।শিশুদের গ্রন্থাগারমুখী করতে একসময় তিনি বেশ কিছু সুন্দর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন শিলিগুড়ি মহকুমা গ্রন্থাগারে।শিলিগুড়ি যখন কর্পোরেশন হয়নি সেই শিলিগুড়ি পুরসভাতেও একসময় তিনি নির্বাচিত কমিশনার ছিলেন।এখন অবসর জীবনে লেখালেখি আর বই সঙ্গে পত্রিকা প্রকাশনাই তাঁর একমাত্র নেশা।নিজের বাড়িতে একটি ছোটখাটো গ্রন্থাগারও গড়ে তুলেছেন। আর উত্তর ধ্বনির মূল্যবান সব সংখ্যা প্রকাশনায় ডুবে থাকছেন।রবীন্দ্রনাথ সংখ্যা থেকে মুজফফর আহমেদ সংখ্যা, জনজাতি সংখ্যা, বাংলাদেশ সংখ্যা সহ আরও মূল্যবান সব সংখ্যা তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছেন সেই ১৯৮০ সাল থেকে। আর গবেষণাধর্মী মূল্যবান সব লেখা নিয়ে প্রকাশিত সংখ্যাগুলো আগামী প্রজন্মের অন্তত মননশীল ছেলেমেয়েদের কাছে যে মূল্যবান হয়ে উঠবে তাতো বলাই বাহুল্য। এই শেষ বয়সে পৌঁছেও তিনি সকলকে বলছেন,বই এর কোনো বিকল্প নেই। সবাই গ্রন্থগারমুখী হওয়ার সঙ্গে লিটল ম্যাগাজিন এর প্রতি উৎসাহ দেখাক।লিটল ম্যাগাজিনের সাহিত্য সৃজন মগজকে উন্নত করে, মগজকে শুভ দিকে চালিত করে।