নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়ি ঃতিনি মৃৎশিল্পী নন, তবে রং তুলি নিয়ে শেষ মুহূর্তে দেবী সরস্বতীকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বছরের এই একটা দিন তিনি তার অমৃতার ছাত্রীদের নিয়ে সরস্বতী পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত হলেও বছরের অন্য দিনে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন মহিলাদের হাতের কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভরতার পাঠ দিতে। শিলিগুড়ি হায়দারপাড়ার শ্রী মা সরণিতে স্বনির্ভরতার শিল্পী কনিকা ঘোষ বিগত ত্রিশ বছর ধরে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেছেন।
তিনি যখন কলেজে পড়তেন তখন থেকেই তাঁর হাতের কাজের প্রতি নেশা। পরবর্তীতে সেই নেশা আরো অন্য মাত্রা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, মেয়েরা হাতের কাজ শিখে স্বনির্ভর হতে পারলে দেশ ও সমাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে। আর সেই ভাবনা থেকেই তিনি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। যেখানে ২০০ জন ছাত্রী নিয়মিত হাতের কাজ শিখছেন। কেও ফেব্রিকের কাজ, কেউবা ক্রুশের কাজ। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া অনেক মহিলাই কনিকাদেবীর কাছ থেকে হাতের কাজ শিখে আজ স্বনির্ভর হয়েছেন। দেবযানি সরকার আজ শাড়ি, চুড়িদারের সুন্দর পেইন্টিং করতে জানেন। আবার মৌসুমী রায়, মানসি রায়,জলি সাহারা সবাই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে হাতের কাজে আজ বেশ দক্ষ। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনি পরিচালিত বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে বস্তির মেয়েদের হাতের কাজ শিখিয়ে চলেছেন তিনি। তার কাছ থেকে শিখে বস্তির মেয়েদের কেও রাখি বানাতে জানে, কেউবা গ্রিটিংস কার্ড তৈরি করতে জানে। সীমা শা, অঞ্জলি শর্মা সহ আরো অনেকে এভাবেই
হাতের কাজ শিখে নিজেদের ভিত শক্ত করছে। সরস্বতী পুজোতেও তাদের হাতের কাজের তালিম হয়। পরিচালনায় থাকেন কনিকাদেবী স্বয়ং। সহযোগিতায় থাকেন তার স্বামী, বিশিষ্ট নাট্যকার কাঞ্চন ঘোষ। মানসি রায়, হাসি রায়, পিয়ালী রায়, স্বাগতা সিনহা, মুন, জলি, পম্পা, খুশবু সবাই এখন হাতে হাত মিলিয়ে উল,রিবন,কাচ, গ্লিটার পেপার, ক্লে দিয়ে সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করতে ব্যস্ত। শনি-রবিবার তারা সকলে মিলে মেতে উঠবেন দেবী সরস্বতীর আরাধনায়। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণ হবে বলে অধ্যক্ষা কনিকাদেবী জানিয়েছেন শান্তিনিকেতন এবং রবীন্দ্রভারতী থেকেও হাতের কাজের তালিম নিয়েছেন কনিকাদেবী। তাছাড়া জাতীয় স্তরের ফেব্রিক, পেইন্টিং প্রতিযোগিতার পুরস্কারও আছে তার। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরেও তিনি তার হাতের কাজ বহুবার মেলে ধরে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। দেশ সিনেমাতেও তার হাতের কাজের উপর সামান্য কিছু অংশ অভিনয়ে মেলে ধরা হয়েছে। কনিকাদেবী বলেন, মেয়েরা যত হাতের কাজ শিখবে, ততই দেশ এগিয়ে যাবে।