বাপি ঘোষ, শিলিগুড়িঃ তার আজ বয়স ৭৬। বিয়ে করেননি। বার্ধক্যের কারনে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে। অথচ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জীবনি পড়েই ছোটবেলাতে স্থির করেন,শিক্ষিকা হবেন। একসময় বিশ্বভারতী তারপর মালদা ওম্যানস কলেজে শিক্ষিকা হিসাবে নিজের জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করেছেন। শিক্ষকতায় নিজের জীবনটা উৎসর্গ করবেন বলে বিয়েই করেননি।শান্তিনিকেতনে থাকার সময় বিদেশীদের বিশ্ব কবির গীতাঞ্জলী পড়িয়েছেন। আজ কেও তার খবর রাখে না। জীবন সায়াহ্নে এসে একরাশ দুঃখ আর রোগব্যাধি নিয়ে তার সময় কাটছে। বুধবার শিক্ষক দিবসের দিন তার হাকিমপাড়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে ফুল, মিস্টি,শাল চাদর এবং প্রচুর ফল দিয়ে তাকে সংবর্ধনা এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন সমাজসেবী মদন ভট্টাচার্য।
ডঃ প্রণতি নাথ।জন্ম দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াঙে,১৯৪১ সালের ২৫ বৈশাখ।শান্তিনিকেতন,বিশ্বভারতীর গবেষক হিসাবে পেয়েছেন পি এইচ ডি। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় এবং বাংলা সাহিত্য নিয়ে গবেষনা করেছেন ।শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলে তিনি পঞ্চম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়েছেন।তারপর বিশ্ব ভারতীতে পড়াশোনা।শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ এম এ,বি এড,পি এইচ ডি।অধ্যাপনা করেছেন শান্তিনিকেতন ও মালদা উইমেনস কলেজে।নীরবে,নিভৃতে,একাকীত্বে সাহিত্য চর্চা করাই তার নেশা। মূলত কবিতা,ছড়া,গল্প,রম্যরচনা,প্রবন্ধ তিনি বহু লিখেছেন। সেই পঞ্চাশের দশক থেকে মালদা ও শিলিগুড়িতে এমন কোনও লিটলম্যাগ ছিল না যেখানে তার কবিতা ছিল না।অধ্যাপনাকালে মালদায় তিনি নিজেও বিহঙ্গ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন।প্রয়াত অমিয়ভূষন মজুমদার,অজিতেশ ভট্টাচার্য,মহাশ্বেতা দেবী,সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুধীর গঙ্গোপাধ্যায়, অভিজিৎ সেন, সহ আরও অনেক গুনী কবিসাহিত্যিক এবং লেখকের সংস্পর্শে তিনি আসেন।তাদের উৎসাহেে লেখেন কবিতার অনেক বই।এপর্যন্ত তার কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে ৪৬ টি।এই বার্ধক্যেে এসেও কবিতা আর লেখালেখি তাকে ছাড়েনি।তবে সুগার, প্রেসার, অ্যানিমিয়া সহ বিভিন্ন রোগ এখন তার সঙ্গী।বুধবার সকাল থেকে তার মনে পুরনো শিক্ষক দিবসের স্মৃতি মনে পড়তে থাকে।এই পবিত্র দিনে ছাত্রীরা সব হাত ভরিয়ে তাকে রাখি পড়াতেন,কেও দিতেন ফুল,কেও দিতেন কলম। আজ কেও তার খবর নেয় না।ছোটবেলায় তার বাবা প্রয়াত রাধারঞ্জন নাথ তাকে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের একটি জীবনি কিনে দিয়েছিলেন।সেই জীবনি তাকে খুব আকৃষ্ট করে।তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন,শিক্ষক হয়ে সত্যানুসন্ধানের কাজে নামবেন।কুড়ি থেকে যেভাবে ফুল ফোটে সেভাবেই শিশুদের শিক্ষা দিয়ে ফুলের মতো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলবেন।তার মা প্রমিলাদেবী চাইতেন,তিনি সঙ্গীত শিল্পী হয়ে উঠুন। মা- এর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে তিনি সেতার,গিটার,বেহালা সবেতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বেশ ভালোবাসেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। বিশ্ব ভারতীতে গুনী ছাত্রী হিসাবে একসময় চিহ্নিত হয়েছিলেন। বিশ্ব কবির গীতাঞ্জলী তিনি বিশ্ব ভারতীতে একসময় পড়িয়েছেন লন্ডন ও জাপানের ছাত্রছাত্রীদের। জাপানের মেরিকো উচিয়ামো তার কাছে গীতাঞ্জলীর পাঠ শিখে এবং রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়মিত শিখে তার গুনমুগ্ধ হয়ে উঠেছিলেন।আজ তিনি শারীরিক এবং আর্থিক কস্টেও আছেন। থাকেন শিলিগুড়ি হাকিমপাড়ায়। তার বহু কবিতার বইয়ের মধ্যে একটি হল হারানো আংটির সন্ধানে।শিক্ষক দিবসের দিন এখন তাকে আর আগের মতো কেউ স্মরন করে না। বুধবার অবশ্য এই প্রতিবেদকের কাছে খবরটি পেয়ে তার কাছে যান শিলিগুড়ির সমাজসেবী মদন ভট্টাচার্য। মদনবাবু তাকে ফুলের তোড়া, মিস্টির প্যাকেট, শাল চাদর উপহার দেন।তার সঙ্গে প্রচুর কলা, আপেল,মোসাম্বি, বেদানা উপহার দেন। মদনবাবু বলেন, এই রকম গুনী মহিলা আজকের দিনে বিরল। শিক্ষক দিবসে তিনি তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আগামী দিনে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দেন। ে