নিজস্ব প্রতিবেদন : পাহাড় বরাবরই বহু পর্যটককে টানে।কিন্তু দার্জিলিং পাহাড়ে বহু পর্যটককে টেনে আনার পিছনে কিন্তু অন্যতম আকর্ষণ কিন্তু টয় ট্রেন।বিশ্বের ঐতিহ্যমন্ডিত রেলের তালিকায় ঠাঁই করে নেওয়া দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের টয় ট্রেনে চেপে দার্জিলিং পাহাড় উপভোগ করার মজাই আলাদা। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে এই ডি এইচ আরে আরও তিনটি নতুন ডিজেল ইঞ্জিন আসতে চলেছে। এই মুহুর্তে ডিজেল ইঞ্জিনগুলো এখন পুরোদমে তৈরি হচ্ছে অসমের বঙ্গাইগাওতে।ডি এইচ আর সূত্রে জানানো হয়েছে, এনজেপি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ডি এইচ আরের মোট১৩টি স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে তিনটি স্টেশন সমতলে।বাকি ১০টি স্টেশন পাহাড়ে।পাহাড়ের যেসব স্থানে স্টেশনগুলো রয়েছে সেগুলো হলো সুকনা,রংটং,তিনধারিয়া,গয়াবাড়ি,মহানদী,কার্শিয়ং, টুং,সোনাদা,ঘুম এবং দার্জিলিং। এরমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেল স্টেশন হলো ঘুম,যার উচ্চতা ৭৪০৭ ফুট।১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ সরকার এই স্টেশন তৈরি করে। অপরদিকে দার্জিলিং রেল স্টেশনের উচ্চতা ৬৮০২ ফুট। ১৮৭৯ থেকে ১৮৮১ সালের মধ্যে সমতল থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ তৈরি হয়েছিল। তখন সমতলে এই টয় ট্রেনের প্রধান কেন্দ্র ছিলো শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন। ৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথে ৫০০টি ছোট সেতু এবং পাঁচটি বড় সেতু পড়েছে। একে ন্যারোগেজ রেল পথও বলা হয়। রেল পথের একটি লাইন থেকে আরেক লাইনের দৈর্ঘ্য দুফুট। কিছু দিন আগে দার্জিলিং এবং ঘুম স্টেশনে পর্যটকদের কথা চিন্তা করে ফ্রি ওয়াইফাই চালু হয়।কিন্তু তারপর তাতে কিছু সমস্যা তৈরি হলেও আশা করা হচ্ছে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে পুরো এই পাহাড়ি রেল পথ জুড়ে বিশেষ ফাইবার পাতার কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন সব পাহাড়ি স্টেশনেই ওয়াইফাই থেকে নেট পরিষেবা চাঙ্গা করে দেওয়া যাবে।এখন কার্শিয়ং পর্যন্ত ফাইবার পাতার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। দার্জিলিং পর্যন্ত ফাইবার পাতার কাজ শেষ হলে টয় ট্রেন থেকেই নেট পরিষেবা এবং ওয়াইফাই চাঙ্গা করে তোলা যাবে।
শিলিগুড়ি জংশনে রয়েছে এই দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ক্যাম্প অফিস। তার ডিরেক্টর প্রিয়াংশুর তত্বাবধানে পুরো কাজ চলছে। সেই ক্যাম্প অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন এই শীতের সময় টয়ট্রেনে তেমন ভিড় নেই। খুব একটা পর্যটকও নেই পাহাড়ে।এরমধ্যেই আস্ত টয়ট্টেন পুরোটা ভাড়া করে নিচ্ছেন বিদেশিরা।চলতি মাসের ১৪,১৫,১৬ জানুয়ারি তিন দিনের জন্য টয় ট্রেন ভাড়া করেছে ব্রিটেনের একটি কোম্পানি। একদিন তারা পুরো ট্রেনটিন ভাড়া করেছে এনজেপি থেকে তিনধারিয়া,একদিন তিনধারিয়া থেকে দার্জিলিং, আরেকদিন সুকনা থেকে রংটং টি সাফারি।একদিন স্টিম ইঞ্জিন চালিত পুরো টয় ট্রেন ভাড়া হয়েছে, আর দুদিন ডিজেল চালিত টয় ট্রেন পুরো ভাড়া করেছে ব্রিটেনের কোম্পানি। দুটি কোচ সমেত স্টিম ইঞ্জিন চালিত পুরো টয়ট্রেনের ভাড়া ত্রিশ কিলোমিটার পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকা আর দুটি কোচ সমেত ডিজেল ইঞ্জিন চালিত পুরো টয়ট্রেনের ভাড়া হলো ত্রিশ কিলোমিটার পর্যন্ত ৫৬ হাজার টাকা। রেলের তরফে এই পুরো টয় ট্রেন ভাড়া নেওয়াকে চার্টার্ড বলা হয়।
এখন যেভাবে চলছে টয়ট্রেনগুলো, তা হলো– এনজেপি থেকে দার্জিলিং দুটি কোচ সমেত টয়ট্রেন যাত্রা। সকাল দশটায় সেই ট্রেন এনজেপি থেকে ছাড়ে আর সন্ধ্যা ছটায় দার্জিলিং পৌছায়।তাতে এসি কোচে ১৬টি এবং নন এসি কোচে ২০টি আসন রয়েছে। এসি কোচের ভাড়া ১৬০০ টাকা, নন এসি কোচের ভাড়া ১৫০০ টাকা। অপরদিকে দার্জিলিং থেকে এনজেপি পর্যন্ত টয় ট্রেন চলে একটি।সকাল নটায় দার্জিলিং থেকে সেই ট্রেন ছাড়ে, এনজেপি পৌঁছায় বিকেল পাঁচটা সাড়ে পাঁচটায়। দার্জিলিং থেকে এনজেপির উদ্দেশ্যে তিনটি কোচ নিয়ে সেই ট্রেন রওনা দিলেও কার্শিয়াংয়ে একটি কোচ ছেড়ে সেই ট্রেন দুটি কোচ সমেত এনজেপি পৌঁছায়। আবার কার্শিয়াংয়ে ছেড়ে দেওয়া সেই কোচ, এনজেপি থেকে রওনা দেওয়া টয় ট্রেনটি দার্জিলিং পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যায়। অপরদিকে জয় রাইডের টয় ট্রেন সার্ভিস চলছে আটটি।দার্জিলিং থেকে ঘুম পর্যন্ত আটটি জয় রাইড সার্ভিস চলে,তাতে স্টিম ইঞ্জিনে ভাড়া ১৫০০ টাকা,ডিজেল ইঞ্জিনে ভাড়া ১০০০ টাকা। এই মুহূর্তে টয়ট্রেনে তেমন ভিড় না থাকলেও পর্যটন মরশুমে ব্যাপক ভিড় হয়।আই আর সি টি সির মাধ্যমে টিকিট বুক করা যায়।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন: