নিজস্ব প্রতিবেদন, শিলিগুড়িঃ উত্তরবঙ্গে এই সময় যাদের নাম লোকসঙ্গীত চর্চায় উল্লেখ করার মতো তাদের মধ্যে একজন হলেন শিলিগুড়ি ভারতনগরের মহম্মদ সাত্তারউদ্দিন আহমেদ। লোকসঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনি একজন তারা, একথা বললেও ভুল বলা হবে না।
লোকসঙ্গীত শিল্পী মহম্মদ সাত্তারউদ্দিন আহমেদের বাবার নাম আজিমুদ্দিন মিঞা। তিনিও ছিলেন নামকরা লোকসঙ্গীত শিল্পী। যদিও এখন আর তিনি বেঁচে নেই। তবে তিনি ছিলেন আকাশবাণী শিলিগুড়ির নিয়মিত শিল্পী। সাত্তারউদ্দিন আহমেদের দাদু প্রয়াত আব্বাসউদ্দিন বিশ্বখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী। যদিও তিনি প্রয়াত হয়েছেন। আর বাবা ও দাদুর পরম্পরা মেনে সাত্তারউদ্দিনও লোকসঙ্গীত চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোচবিহার জেলার চিলকিরহাটের দীঘিরহাট গ্রামে জন্ম সাত্তারউদ্দিনের। ছয় মাস বয়সে তিনি বাবার সঙ্গে শিলিগুড়ি চলে আসেন। তার বাবা আকাশবাণী কার্শিয়াঙে চাকরি পান। সেই সূত্রে শিলিগুড়ি আসা। আর শিলিগুড়ি এসে বাবার সংস্পর্শে থাকার সময় লোক সঙ্গীত তার মনে গেঁথে যেতে থাকে। সেই অর্থে তার বাবাই প্রথম তার সঙ্গীত জীবনের গুরু। তার বাবার হাত ধরেই লোকসঙ্গীত চর্চার জন্য তিনি বিখ্যাত শিল্পী প্রতিমা বড়ুয়া, ভূপেন হাজারিকা, অমর পাল, বুদ্ধদেব রায়, প্রহ্লাদ ব্রহ্মচারী, ললিত দাস, ধনেশ্বর রায় প্রমুখের সংস্পর্শে এসে সঙ্গীতের তালিম নেন। আবার পালাগানের জন্য উত্তম দাসর কাছে যান। তার কাছে তিনি কুশান, বিষহরার তালিম নেন।এভাবে শিখতে শিখতেই তিনি ৩২০ টি লোকসঙ্গীত অনায়াসে গাইতে পারেন। যদিও লোকসঙ্গীতের ৩৩২ টি শাখা এবং ৪২০ টি উপশাখা রয়েছে।
সাত্তারউদ্দিনের বয়স এখন ৩২ বছর পেরিয়েছে। তিনি আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পী। লোকসঙ্গীতকে ভালোবেসে তিনি তার বাড়িতে খুলেছেন মেঠো সুর সঙ্গীতালয়। সকাল সন্ধ্যে সেখানে লোক সঙ্গীত শেখানো হয়। দুশোর বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে তার। দশ বছরের বালক থেকে ৯৫ বছরের বৃদ্ধ তার কাছে লোকসঙ্গীত শেখে। তিনি বলেন, লোকসঙ্গীত আমার প্রাণ।লোক সঙ্গীত হল মাটির গান। তাই ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি নিয়ে পড়ে থাকি। লোকসঙ্গীত মানুষের মনের অবসাদ দূর করে। নিজে গান লিখে সুরও দেন তিনি। সামাজিক সচেতনতার ওপর সঙ্গীতও রচনা করেছেন তিনি। আর এসঙ্গীতের প্রতি তার এতো নেশা বা ভালোবাসা যে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।রিকশা চালক, ঠেলা চালকরাও অনেকে তার কাছে গান শিখতে আসে।