নিজস্ব প্রতিবেদন ঃ তখন সবে সত্তর দশকের শুরু।১৯৭১ সাল। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্র চলছে এক রাজনৈতিক অস্থিরতা। কোথাও শিক্ষার প্রসার বা স্কুল চালানো ছিল এক কঠিন কাজ। এরমধ্যেই শিলিগুড়িতে একদল মহিলা সাহস করে স্কুল খুলেছিলেন শহরের দেশবন্ধু পাড়া এলাকায়।লুডু খেলে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর ভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকে সেই মহিলাদের মধ্যে। আর সেই সময় শিলিগুড়িতে আজকের দিনের মতো এত বেসরকারি স্কুলের রমরমা ছিলো না। আর সেই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই সাহস করে একদল মহিলা শিলিগুড়িতে শুরু করেছিলেন শিশু মহল নার্সারি স্কুল।প্রখ্যাত টেবিল টেনিস খেলোয়াড় গনেশ কুন্ডু, টিঙ্কু দে,কৃতী সাংবাদিক চিত্রদীপ চক্রবর্তী, নৃত্য শিল্পী শ্রাবনী চক্রবর্তী,সঙ্গীত শিল্পী পাঞ্চালি চক্রবর্তী, অর্পিতা দে সরকার সহ আরও অনেকেই এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বা ছাত্রী। সেই স্কুলের সূত্রপাত যাঁরা ঘটিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন হলেন শ্রীমতী অঞ্জলি চক্রবর্তী। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের আগে শ্রীমতি অঞ্জলি চক্রবর্তীর কাছ থেকে শুনুন সেই স্কুলের পুরনো কিন্তু উল্লেখযোগ্য কিছু কথা।শুধু পড়াশোনা নয়,পড়ার সঙ্গে খেলাধুলা, সঙ্গীত,নৃত্য সবেতেই ছেলেমেদের শৈশব থেকে তুখোড় করে তুলবার একটা প্রানপন প্রয়াস ছিলো শিক্ষিকাদের মধ্যে। শুরুতে তিন বছর শিক্ষিকারা কোনো বেতনই গ্রহণ করেন নি,যে যার বাড়ি থেকে শতরঞ্চি নিয়ে আসতেন,সেটা পেতেই চলতো পাঠদান।আর ছাত্রছাত্রীদের বেতন ছিলো কত জানেন? মাত্র তিন টাকা।১৩ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্কুলের।পরে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যায়। আর তিন বছর স্কুল চলার পর মাসিক একশ টাকা বেতন শুরু হয় শিক্ষিকাদের।আজ বার্ধক্যে পৌঁছে অঞ্জলিদেবী বলেন,বেতনটা তখন আমাদের কাছে বড় বিষয় ছিলো না। বড় বিষয় ছিলো ছেলেমেয়েদের ভালো শিক্ষা দিয়ে মানুষ তৈরির ভিত তৈরি করে দিতে হবে শৈশব থেকেই ।
স্কুল শুরু থেকে ও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষিকা হিসাবে সেখানে যুক্ত ছিলেন সবিতা চৌধুরী, মৈত্রেয়ী চৌধুরী, কল্পনা বর্ধন, মঞ্জু খাসনবিস, সঙ্গীতা বর্ধন, শিপ্রা দাসগুপ্ত, জলি বর্ধন, মন্দিরা বর্ধন, ইন্দিরা বর্ধন ও ছায়া দাস ওরফে আভা।
অশিক্ষিক কর্মচারীদের মধ্যে ছিলেন সুনীতি ভট্টাচাৰ্য, বীনা দাস, সুনীল রায়, মনি রায়।সকাল এগারটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত স্কুল চলতো।স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্রী নৃত্য শিল্পী শ্রাবনী চক্রবর্তী এবং সঙ্গীত শিল্পী পাঞ্চালি চক্রবর্তী পরবর্তীতে ওই স্কুলেই নৃত্য এবং সঙ্গীত শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগ দেন। দেশবন্ধুপাড়া,বাবুপাড়া সহ বিরাট এলাকায় সেই সময় কোনো বেসরকারি স্কুল না থাকায় এই স্কুল ছিলো বেশ জনপ্রিয়। স্কুলের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করতেন শিলিগুড়ি লেকটাউন নিবাসী অঞ্জলিদেবী সহ অন্যরা।কিন্তু হঠাৎ ১৯৯৮ সালে সেই স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।যে স্কুল নিয়ে তাঁরা অনেক স্বপ্ন দেখতেন সেই সব স্বপ্ন হঠাৎ জলে ধুয়ে যায়।শিক্ষক দিবসের প্রাক মুহুর্তে নিজেদের সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা বারবারই স্মরন করছিলেন অঞ্জলিদেবী।আর তাঁর স্বামী পরিতোষ চক্রবর্তী এতটাই সৎ ছিলেন যে প্রশাসনিক উঁচু পদে থেকেও ওই স্কুলের জন্য কখনোই নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।আজ শিক্ষক দিবসের আগে শুনুন অন্যরকম এক শিক্ষিকার কথা।
বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন—