নিজস্ব সংবাদদাতা, ২ সেপ্টেম্বর,মালদা: পরিবারের সদস্যদের বয়স ১৮ থেকে ২০ হলেই অন্ধ হয়ে যায়। এমনই অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটছে মালদার মানিকচকের এক পরিবারে।
মানিকচকের ছোট ধরমপুর গ্রামে তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মোট পাঁচ জনের পরিবার। পরিবারের প্রধান বৈদ্যনাথ মন্ডল বয়স আশি ছুঁইছুঁই। সংসারের বোঝা বইতে বইতে তার শরীর শীর্ণকায় হয়ে পড়েছে। বৈদ্যনাথবাবু তার জীবনে বহু কিছু দেখেছেন। তার চোখের সামনেই তার দুই ছেলেকে পুষ্টির অভাবে মরতেও দেখেছেন। এখন তার সংসার তিন অন্ধ ছেলে এবং একটি অন্ধ মেয়ে নিয়ে কোনভাবে বেঁচে আছেন। জীবন জীবিকার জন্য অন্যের মুখ চেয়ে থাকাটাই শেষকথা হয়েছে। ভিক্ষা করে জীবন কাটে এখন তাদের। বৈদ্যনাথবাবু তার বয়সজনিত কারণে এখন আর চোখে দেখতে পান না। কোন এক অজানা কারণে ছেলেমেয়েদের বয়স আঠেরো থেকে কুড়ি হলেই তারা অন্ধ হয়ে যায়।
বৈদ্যনাথবাবুর স্ত্রী এবং পাঁচ ছেলে রায়চাঁদ, দিলীপ, তপন, সুনীল, এবং মেয়ে কেশবতী মন্ডল নিয়ে মোট আট জনের পরিবার ছিল। পুষ্টির অভাবে দুই ছেলে আগেই মারা গেছেন।
বৈদ্যনাথবাবুর স্ত্রী এই কষ্টের সংসার ছেড়ে বহুদিন আগেই পরলোকেগমন করেছেন।গ্রামবাসীদের কথায় বৈদ্যনাথবাবুর ছেলেমেয়েদের চোখ দেখলে বোঝার উপায় নেই যে তারা অন্ধ। তাই ভিক্ষা চাইলেও অনেক অনেক সময় ভিক্ষা পায়না। অন্ধত্ব রোগের জন্য চিকিৎসা যে করায়নি তাও বলা যাবে না। নেপাল,পূর্ণিয়া, মালদা, কলকাতা বহু জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েছেন কিন্তু কোন লাভ হয়নি। শুধু হয়েছে মোটা মোটা টাকা খরচ। শেষমেষ পরিবারের সকলেই কপাল আর ভগবানের সিদ্ধান্ত মেনে অন্ধত্ব নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। এই অসহায় পরিবারের পাশে আজও কোনো সাহায্যের হাত এসে পৌঁছায়নি। জীবনের শেষ বেলায় বৈদ্যনাথবাবুর কপালে জুটেছে একটা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বাড়ি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জালা, এই জালা কি করে মেটাবেন এই ভাবনায় জীবনের শেষ বেলায় এসে বেশি করে ভাবাচ্ছে বৈদ্যনাথবাবু ও তার পরিবারকে।