ফেলে দেওয়া সামগ্রী থেকে হস্ত শিল্পের নেশায় জয়শ্রীদেবী

শিল্পী পালিতঃ নদীয়া জেলা থেকে জয়শ্রী রায়মৈত্র লিখে পাঠিয়েছেন তাঁর হস্ত শিল্পের কথা। তার সঙ্গে পাঠিয়েছেন ছবিও –

নিজের শিল্প-জীবন সম্বন্ধে লিখতে বসে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই বীণাপাণি শিল্পী দিদিকে । আমি যেহেতু বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের সঙ্গে জড়িত, সেহেতু এতদিন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সাহিত্য সংগঠনের অনুরোধে নিজের পরিচিতি কবি কিংবা গল্পকার কিংবা প্রাবন্ধিক হিসাবে লিখেছি । কিন্তু সাহিত্য-জগৎ ছাড়াও সংস্কৃতি জগতের অন্যান্য শাখা-প্রশাখাতেও আমার বিচরণ । হস্ত-শিল্প, অঙ্কন শিল্প ও সঙ্গীত-শিল্প আমার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার জন্যই হয়তঃ নতুন করে পরিচিতি লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম । আর এই উপলব্ধি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল বীণাপাণিদি’র কথায় ।

নদীয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগর মৃৎ-শিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ । আর এই শহরে জন্ম এবং বেড়ে ওঠবার সুবাদেই হয়তঃ আমার শিল্প-মনস্কতার আবির্ভাব । ছোটবেলা থেকেই শিল্পে বিশেষ আগ্রহী আমি । ছবি আঁকার পাশাপাশি ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিষ যেমন কাগজের বাক্স, পুরানো কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, আইসক্রিমের কাঠি, চায়ের কাগজের কাপ, ডিমের খোলা ইত্যাদি জিনিষ সংগ্রহের তালিকায় থাকতো । তবে তখন মিশনারি স্কুলে পড়ার সুবাদে প্রচণ্ড পড়াশোনার চাপ থাকতো । বাবা পড়াশোনার উপরই বেশী জোর দিতেন । মাঝে মাঝে লুকিয়ে টুকটাক বানাতাম । আর ফেলে দেওয়া জিনিষগুলো সংগ্রহ করে রাখার জন্য যথেষ্ট বকুনিও খেতাম । ছোটবেলায় কিন্তু কবিতা লেখা কিংবা গল্প লেখার প্রতি আমার কোন উৎসাহ ছিল না । বরঞ্চ স্বাভাবিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পকর্ম ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখার প্রতিই ঝোঁক ছিল । রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার জন্য অবশ্যই মায়ের উৎসাহ ও অবদান অনস্বীকার্য ।

যথারীতি স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির পাঠ শেষ করলাম । রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা চলতে লাগলো । সাথে শুরু হল কবিতা লেখা ও ছোট গল্প লেখা । বলা যেতে পারে রবি ঠাকুরের অনুপ্রেরণায় আমার লেখালাখি শুরু । ২০১১ সালে কোলকাতা বইমেলায় অলৌকিক গল্পের সমাহার নিয়ে আমার প্রথম গ্রন্থ “অলৌকিক” প্রকাশিত হয় । বাংলা-কবিতা আসরের ওয়েবসাইটে আমি একজন নিয়মিত কবি । আমি খুবই আনন্দিত যে বাংলা কবিতার আসরে আজ পর্যন্ত প্রায় ৬০০টি কবিতা উপহার দিতে পেরেছি । পাশাপাশি তারুণ্য ডট কম-এ আমার বেশ কয়েকটি গল্প ও জীবনী-প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে । এছাড়া পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পত্র-পত্রিকার সাথে সংযুক্ত আছি । সেসব পত্র-পত্রিকায় আমার কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ নিয়মিত ছাপা হয়ে থাকে । বিভিন্ন পত্রিকা থেকে পাওয়া সন্মানে আমি উৎসাহ পাই । ২০২০ সালে একটি পত্রিকার প্রকাশনায় আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “রোমান্টিক বিকেল” প্রকাশিত হয় । সাহিত্যের এই অংশে নিজেকে প্রবাহিত করলেও মনের মধ্যে শিল্পকর্মের বাসনাটা সুপ্ত ছিল । শুরু করলাম আমার শিল্প-সাধনা । ফেলে দেওয়া জিনিষগুলো শিল্পে রূপান্তর করা । শিল্পকর্মের কারিকুরি মাঝে মাঝে ইন্টারনেটে দেখলেও আমার নিজের চিন্তা-ভাবনা কাজে লাগিয়ে তার বাস্তব রূপ দেই । সারা বিশ্বের বিভিন্ন অন-লাইন গ্রুপের (যেমন হার্ট অফ আর্ট কন্টেস্ট, ইউরো আর্ট কন্টেস্ট, লায়ন ইন্টারন্যাশনাল আর্ট কন্টেস্ট প্রভৃতি) প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে অ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট পেয়েছি এবং তাতে আমার শিল্প-কর্মের প্রতি উৎসাহ বেড়েছে । ফেলে দেওয়া কোল্ডড্রিঙ্কসের বোতল দিয়ে পুতুল, ফুলদানি, পুরানো খবরের কাগজের সরুসরু রোল করে আঠার সাহায্যে বিভিন্ন ফিগার, কাগজের ট্রে বানিয়ে প্রয়োজন মত কালার দিয়ে শিল্প-কলা তৈরি করি । পলিপ্যাক যেখানে সেখানে না ফেলে সেগুলি দিয়েও হস্তশিল্প বানানোর চেষ্টা করি ।

এই হস্তশিল্প ছোটবেলা থেকেই আমার কাছে খুব ভালোবাসার । এখনও বাড়িতে পূরানো জিনিষের আবর্জনা বোঝাই থাকে । আমার হাজব্যান্ড মাঝে মাঝে রাগ করলেও শিল্প তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে দিয়ে সাহায্য করে । যদিও আমার ভালোবাসা রবীন্দ্রসঙ্গীত, তবুও আমার অন্য এক ভালোলাগা ও ভালোবাসা আমার হস্তশিল্প । আর এই জন্যই প্রতি বছর হস্তশিল্প মেলায় ঘুরে বেড়াই । আবারও ধন্যবাদ বীণাপাণি দিদিকে । যার জন্য এই পত্রিকায় আমার আত্মপ্রকাশ ।।

==============================
জয়শ্রী রায় মৈত্র ।। ঠিকানা ঃ প্রযত্নে ঃ স্বঃ বিমলেন্দু রায় ।। নগেন্দ্র নগর, থার্ড লেন, ডাকঘর ঃ কৃষ্ণনগর, জেলা ঃ নদীয়া