সঙ্গীতের সঙ্গে লেখালেখির নেশায় হাওড়া শিবপুরের মীনাক্ষী ব্যানার্জী

শিল্পী পালিত ঃ আজ আমাদের এই ওয়েবনিউজ পোর্টাল এর আত্মকথা বিভাগে লিখেছেন মীনাক্ষী ব্যানার্জী—

নমস্কার আমি মিণাক্ষী ব‍্যানার্জি।আমি যখন খুব ছোট তিন বছর হবে তখন বাবা জ্যোতির্ময় চ্যাটার্জী এসরাজ বাজাতেন। ওই সুর কেমন যেন আচ্ছন্ন করে রাখতো। শুনেছি ঘুরতে ফিরতে আমি ওই সুরটা নাকি রিপিট করার চেষ্টা করতাম। বাবার মাস্টারমশাই চন্দননগর থেকে হাওড়া আসতেন বাবাকে শেখাতে। বললেন তোমার মেয়ের গলায় গান আছে। ওকে আমিই শেখাবো। বউবাজার থেকে ৯৯/ টাকার এক হারমোনিয়াম কিনে আনলেন। দাদুর কোলে বসেই শিক্ষালাভ শুরু।
এরপর স্কুলের শেষের দিকে যোগাযোগ হলো অশোকতরু বন্দোপাধ্যায় এর সঙ্গে।শেখার সুযোগ হলো। এখানে যখন বাল্মীকি প্রতিভা রবীন্দ্রসদন স্টেজে হতো আমরা সমবেত সঙ্গীতের জন্য একপাশে বসতাম। ছাত্ররা হত দস্যু। বাল্মীকি হতেন মাস্টারমশাই অশোকদা নিজে। সরস্বতী হতেন গৌরী ঘোষ। পরবর্তী সময়ে সরস্বতী হতে। শ্রীনন্দা দি।
সে ছিল এক মিষ্টি অভিজ্ঞতা। কলেজ পাশ করার পর এই অশোকতরু মাস্টারমশাই বললেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার চেষ্টা কর। তখন পরীক্ষা দিতে হতো ভর্তি হতে। প্রাক্টিকাল পরীক্ষা। এরপর সুচিত্রা মিত্রের কাছে, সুমিত্রা সেন, মায়া সেন, বুলবুল সেনগুপ্ত, মীরা বসু, নীহাররঞ্জন বন্দোপাধ্যায়, প্রথিতযশা শিল্পীদের সান্নিধ্যে সঙ্গীত শিক্ষা চললো। মায়াদির কাছে এবং নীহাররঞ্জন বন্দোপাধ্যায় এর কাছেও বেশ কয়েকবছর আলাদা ভাবে গান শিখি। এরা আমাদের প্রকৃতই মানুষ করে তুলেছিলেন।
ইতিমধ্যেই প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতির পরীক্ষক হিসাবে বিভিন্ন সেন্টারে পরীক্ষা নিতে যেতাম ।পরবর্তীতে প্রাচীনকলা কেন্দ্র চণ্ডীগড় এখানকার পরীক্ষক হিসাবে কাজ করতে থাকি।
বাড়িতে “নান্দনিক হাওড়া” এই নামে স্কুল শুরু হয়েছিল। তখন আস্তে আস্তে ছাত্র ছাত্রী ছিল ১০০ র উপরে। এরা নিয়মিত আমার পরিচালনায় আকাশবাণী থেকে অনুষ্ঠান করত। কারণ আমি এখানকার শিল্পী ছিলাম।
সম্ভবত কাজের যোগ্যতায় এলাহাবাদ প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতি
সুরশ্রী উপাধি দিয়েছিলেন পরীক্ষক হিসাবে।
এইসময়ে প্রায় তিনহাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন হয়ে
সরকারি চাকরি পাই। মাত্র ছজনকে নেওয়া হয়েছিল।
এখানেও এক বছর পরের থেকেই বহি পরীক্ষক হিসাবে কাজ করতে শুরু করি। যথেষ্ট সুনাম পেয়েছি শুধুমাত্র সব বিশিষ্ট শিক্ষক শিক্ষিকাকে জীবনে পেয়েছিলাম তাই।
তবে অনেক প্রতিযোগিতায় নাম দিতাম এবং অবশ্যই পুরস্কৃত হতাম। শিক্ষিকা হবার পর আর নাম দিতাম না। এইসময়ে আলাপ হলো বিমান মুখোপাধ্যায় এনার সঙ্গে। আগেই আমি শঙ্করলাল মুখারজির কাছে শিখেছিলাম।
নজরুল গীতির দরজাটা আরও ভালো ভাবে আমার জন্য খুলে গেলো। প্রতিনিয়িত আরও শিখতে ইচ্ছা হতো। আমাকে বিমান মাস্টার মশাই পেত্নী বলতেন আর ঠিক পাশে এসে বসতে বলতেন। যত ভয় পেতাম ততই গান ধরতেন।উনি আমাকে ইটিভি বাংলা এদের একটি প্রোগ্রামে পাঠিয়েছিলেন।
দূরদর্শন কেন্দ্র থেকেও আমার গান প্রচার হয়। তবে চাকরীতে গিয়ে, পরে আর সম্ভব হয়নি।
সরকারি একটি পাঠ্য বই লিখেছিলাম। আজও বইটি জনপ্রিয়। সঙ্গীত শিক্ষণ দীপিকা।
একটু লেখালেখির ঝোঁক আছে। বি ই কলেজ মডেল স্কুলের দেওয়াল পত্রিকায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে জীবনের প্রথম কবিতা বেরিয়েছিল। এই স্কুলেই পড়তাম । এরপর আস্তে আস্তে লেখক ও কবি পরিচিতি হয়।
শব্দের প্রতিমা, পরমা, (মহাশ্বেতা দেবী উদ্বোধন করেছিলেন বইমেলায়),২০০১ এই সালে। শ্রদ্ধেয় অশোকতরু বন্দোপাধ্যায় একে উৎসর্গ করা হয়েছিল কারণ কিছুদিন আগেই উনি মারা যান। এরপর প্রিয়ভাজনেষু,উদ্বোধন করেছিলেন( বিমান মুখোপাধ্যায়) এরপর লম্বকর্ণ,বসুন্ধরা ও আমরা এই কবিতার বইগুলি প্রকাশিত হয়।
বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত আছি।
সব খবর ,খবরের ঘন্টা, অর্বাচীন,সাহিত্য প্রয়াসী, সাহিত্য প্রবাহ, মণিমুক্তা, সাবাস পত্রিকা, রা পত্রিকা,মনের দর্পণ, অনুভবের আয়নায়,কলম যখন কথা বলে, মনের কলম, দেশ পত্রিকা আরও অনেক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছি।
অনুষ্ঠান করেছি রবীন্দ্র সদন,শিশির মঞ্চ, শরৎ সদন, গিরিশ মঞ্চ, বিভিন্ন মেলার আয়োজনে যে অনুষ্ঠান হয় সেগুলিতে। মাঝে কয়েক বছর সংস্কৃতির উপর সাংবাদিকতা করেছিলাম।
বিশেষ সম্মান অনেক পেয়েছি।
গানেও। লেখাতেও।

56/2B Rammohon Mukherjee lane
Shibpur Howrah 2