বাপী ঘোষ ,শিলিগুড়িঃ বছরে একদিন বা পঁচিশে বৈশাখ বলে নয়, সারা বছর ধরে নিঃশব্দে রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রচার করে চলেছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই আত্মীয় হিসাবে পরিচিতি পাওয়া এক দম্পতি।শিলিগুড়ি হাকিম পাড়ার বাড়িতে বসে চলছে তাদের এই কবিপ্রেম।
ওই দম্পতির নাম দেবপ্রতিম রায় ও তার স্ত্রী সুচিত্রা রায়।
দেবপ্রতিমবাবু আকাশবাণী শিলিগুড়ির অবসরপ্রাপ্ত প্রথিতযশা শিল্পী।সুচিত্রাদেবী গৃহবধূ হিসাবে পরিচিত হলেও রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। কিন্তু তারা যে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয়দের মধ্যে পড়েন, সেই বিরাট পরিচিতি কখনও কাওকে ভাঙিয়ে নিজেদের বাজার রমরমা করার দিকে নজর দেননি। এই প্রতিবেদক খবরটি পেয়ে তাদের সেকথা জিজ্ঞেস করলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন। যদিও
ঠাকুরবাড়ির অন্দর মহল বইয়ের মধ্যে তাদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয়তার সূত্র ছাপার অক্ষরেই পাওয়া যায়।
সুচিত্রাদেবীর বাড়ি প্রকৃত পক্ষে কলকাতা মানিকতলায়। বিয়ের পর ১৯৮৪ সালে তিনি শিলিগুড়ি চলে আসেন স্বামীর ঘর করতে। পাশ করেছেন রবীন্দ্র ভারতি থেকে। একসময় সুচিত্রা মিত্রের ছাত্রীও ছিলেন। তার মা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের জন্ম জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। তার বাবা বীরেশ্বর প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঠাকুমা ছিলেন শ্বেতাম্বরিদেবী। শ্বেতাম্বরীদেবি
হলেন কাদম্বরিদেবীর ছোট বোন। মায়ের বাড়ির দিক থেকে আরও বিশদে বলতে গেলে বলতে হয়, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের দিদি ছিলেন রাসবিলাসিদেবী। তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ভোলানাথ চ্যাটার্জীর । ভোলানাথচ্যাটার্জীর বাড়ি ছিল চন্দন নগরে। ঠাকুর বাড়িতে ব্রাহ্মন সমাজে বিয়ে করায় ভোলানাথ চ্যাটার্জী চন্দন নগরে থাকতে পারেন নি। তিনি জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই ছিলেন। ভোলানাথ চ্যাটার্জীর ছেলে হলেন মদনমোহন চ্যাটার্জী। তার নামেই আছে মদনমোহন লেন, জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির পিছনে। ভোলানাথ চ্যাটার্জীর ছেলে হলেন খগেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী।
এই খগেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী হলেন সুচিত্রাদেবীর দাদু।খগেন্দ্রনাথ
চ্যাটার্জী বিশ্ব কবির থেকে সাত বছরের ছোট ছিলেন। তিনিই প্রথম রবি কথা প্রকাশ করেন। এটা তার মায়ের বাড়ির দিক থেকে আত্মীয়তার যোগ।
সুচিত্রাদেবীর বড় পিসির বিয়ে হয়েছে গগন ঠাকুরের বাড়িতে। বড় ননদের বিয়ে হয়েছে অবন ঠাকুরের বাড়িতে। তার শ্বশুর বাড়ির যোগ সুত্রও আছে ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে। কলকাতায় গেলেই তাই একবার তার মায়ের জন্মস্থান জোড়াসাঁকোর বাড়ি দেখে আসতে তিনি ভোলেন না। যোগাযোগ আছে
শান্তিনিকেতনের সঙ্গেও। মংপুতে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে প্রথম যখন বিশ্ব কবির মূর্তি বসে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান সুচিত্রাদেবী।
বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখিয়ে চলেছেন তিনি। এরমধ্যে সত্তর বছরের বৃদ্ধাও আছে। তার কথায়, প্রতিদিনই রবীন্দ্র সঙ্গীতের মাধ্যমে কবিকে শ্রদ্ধা জানাই। অপরদিকে সুচিত্রাদেবীর স্বামী দেবপ্রতিম রায়ের বড় পিসির বিয়ে হয়েছিল বরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পালিত পুত্র ক্ষেমেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জীর সঙ্গে।তার জ্যাঠতুতো বড়দির বিয়ে হয়েছিল অবন ঠাকুরের মেয়ের ছেলে মানে নাতির সঙ্গে। আবার ঠাকুর বাড়ির
পঞ্চ কন্যার মধ্যে এক মেয়ে ছিলেন মেনকা ঠাকুর। সেই মেনকা ঠাকুরের উৎসাহেই রবীন্দ্র সঙ্গীত শুরু করেন দেবপ্রতিমবাবু। কলেজ জীবন থেকেই তার রবীন্দ্র সঙ্গীত শুরু হয়। যদিও মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মানুষ দেবপ্রতিমবাবু। কিন্তু মেনকা ঠাকুর, যাকে তিনি মিন্টুদি বলে ডাকতেন, তিনি দেবপ্রতিমবাবুকে প্রায়ই বলতেন, তুই ঠাকুর পরিবারের লোক। কাজেই
রবীন্দ্র সঙ্গীত কর। ফলে আজও দেবপ্রতিমবাবু এবং তার স্ত্রী
সুচিত্রাদেবি রবীন্দ্র প্রনাম করেন প্রতিদিন রবীন্দ্র সঙ্গীত দিয়েই।
এভাবেই অন্যরকম ভাবে চলছে তাদের রবীন্দ্র অনুভুতি।